মোঃ কামাল হোসেন:
যশোরের অভয়নগর থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ওই গৃহবধূ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নর্থ বেঙ্গল রোডে নওয়াপাড়া মডেল কলেজের পিছনে নওয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল মোল্যার স্ত্রী আফরোজা বেগম (৪০)। অভয়নগর থানার ওসি মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যু আফরোজা বেগমের বড় ভাই নূর ইসলাম হাওলাদার জানান, অভয়নগর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে গত শনিবার আনুমানিক রাত ১১টার দিকে অভয়নগর থানা পুলিশ আমার বোন আফরোজা বেগমের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে কোন মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে থানায় ধরে নিয়ে আসে। এরপর আজ রোববার সকালে জানতে পারি আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ডাক্তারা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেষ্ট করাতে বলেন। কিন্তু থানা পুলিশ কোন পরীক্ষা ছাড়াই তাকে আবার থানাতে নিয়ে আসে। থানাতে আসার পরপরই আফরোজা বেগম আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আবার অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশক্সকাজনক হওয়ায় সকাল ১১টায় তাকে যশোর সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরন করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ যখন রাতে আমার বোনকে ধরে নিয়ে আসে তখন তাকে মারতে মারতে আসে। পরে থানাতে এনে তাকে এএসআই সিলোনসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা মারধর ও নির্যাতন করে। নির্যাতনে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে মারপিটের কারনে তার প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় আমার বোন স্ট্রোক করে। ডাক্তাররা প্রথমবার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় নিতে বললেও পুলিশ সেটা না করে তাকে থানায় ফিরিয়ে আনে। এতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এরপর সকাল এগারটার দিকে চিকিৎসার অভাবে সে মারা যায়।
নিহত আফরোজা বেগমের পুত্র মোঃ আরিফ হোসেন মুন্না জানায়, রোববার সকালে অভয়নগর থানায় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে সকাল ৯টায় পুলিশ অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ডাক্তাররা আমার মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ কোন পরীক্ষা ছাড়াই আমার মাকে থানায় নিয়ে আসে। থানায় আসার পরপরই আমার মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও সকাল ১০টায় দ্বিতীয়বার হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় আমার মাকে খাওয়ানোর জন্য ঔষুধ কিনি। কিন্তু পুলিশ আমার মাকে ঔষুধ বা কোন খাবার খেতে দেয়না বলে অভিযোগ করে বলেন তিনি। পরে দ্বিতীয় বার হাসপাতালে নেয়ার পর তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে যশোর সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পতিমধ্যে আমার মায়ের মৃত্যু হয়।
অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ রাকিবুল ইসলাম জানান, রোববার সকালে হাসপাতালে পুলিশ একজন মহিলা রোগী নিয়ে আসেন। তার শরীরে প্রেসার অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে প্রেরন করি। অভয়নগর থানার সহকারি উপ পরিদর্শক (এএসআই) সিলোন আলী নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, থানায় এনে ওই মহিলাকে কোনোভাবেই নির্যাতন করা হয়নি। সকাল নয়টার দিকে তিনি অসুস্থ্য হলে আমাদের মহিলা পুলিশ সদস্যরা তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর আবার উনি অসুস্থ্যবোধ করলে তাকে হাসপালে নেওয়া হয়। তখন ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন কিন্তু হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাজারহাট পৌঁছালে তিনি মারা যান।
তিনি আরও বলেন, ওই নারীর মরদেহ ময়ণাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাকে যদি নির্যাতন করা হয় তবে সেটা অবশ্যই ময়ণাতদন্তে ধরা পড়বে। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম জানান, আফরোজা বেগম নামে একজন মাদক বিক্রেতাকে ৩০ পিস ইয়াবা সহ তার বাড়ি থেকে গতকাল (শনিবার) রাতে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। রোববার সকালে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই দফায় অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরে প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যশোর সদর হাসপাতালে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন হয়েছে।